বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকা তৈরি করা সহজ নয়। তবে পারফরম্যান্স, পরিসংখ্যান, জনপ্রিয়তা ও প্রভাব বিবেচনা করে আমরা এই তালিকাটি সাজিয়েছি। এখানে ৫ থেকে ১ ক্রমে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
৫. মোহাম্মদ রফিক – বাংলাদেশের প্রথম স্পিন বোলিং নায়ক

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক অন্যতম। তিনি দেশের প্রথম স্পিন বোলিং নায়ক হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওডিআই জয়ে ব্যাট ও বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ৭৭ রান করেন এবং ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন।
রফিকের বোলিং দক্ষতা বাংলাদেশের স্পিন বোলিংয়ের ভিত্তি স্থাপন করে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে (২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে) ৫ উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব পরবর্তী প্রজন্মের স্পিনারদের অনুপ্রাণিত করেছে।
৪. মুশফিকুর রহিম – বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় মুশফিকুর রহিমের নাম উজ্জ্বল। তিনি দলের সংকটময় মুহূর্তে ব্যাট হাতে ভরসা দিয়েছেন। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করে তিনি টেস্টে নিজের অবস্থান মজবুত করেন। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৯* রান করে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোরার হন।
মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করেন। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৫ রান করে তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয় করেন। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৬০ বলে সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের দ্রুততম ওডিআই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন।
Also Read:
- শীর্ষ ৫ ক্রিকেটার যারা বিখ্যাত অভিনেত্রীকে বিয়ে করেছেন
- শীর্ষ ৫ ফুটবলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গোলরক্ষকগণ
৩. মাশরাফি বিন মুর্তজা – অনুপ্রেরণাদায়ক অধিনায়ক

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা একটি অনন্য নাম। তিনি দেশের সবচেয়ে সফল ওডিআই অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে এবং পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় করে।
মাশরাফি ২২০টি ওডিআই ম্যাচে ২৭০ উইকেট নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম পেসার যিনি ১৪৭ কিমি/ঘণ্টা গতিতে বল করেছেন। তিনি ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে তিনটি বিপিএল শিরোপা জিতেছেন। ২০১৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যা তার বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ।
২. তামিম ইকবাল – বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পাওয়ারহাউস

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে তামিম ইকবাল অন্যতম। তিনি দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৫১ রানের ইনিংস দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেন। ২০১০ সালে লর্ডসে সেঞ্চুরি করে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের নাম উজ্জ্বল করেন।
তামিম ইকবাল ৩৯১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৫,০০০+ রান করেছেন। তিনি বাংলাদেশের হয়ে সর্বাধিক ২৫টি সেঞ্চুরি করেছেন। ২০২০-২০২৩ সালে তিনি ওডিআই দলের অধিনায়ক ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
১. সাকিব আল হাসান – অলরাউন্ড কিংবদন্তি

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে সাকিব আল হাসান শীর্ষে। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে তিনি ব্যাট ও বল হাতে অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছেন। তিনি টেস্টে ৪৬০৯ রান ও ২৪৬ উইকেট, ওডিআইতে ৭৫৭০ রান ও ৩১৭ উইকেট এবং টি-টোয়েন্টিতে ২৫৫১ রান ও ১৪৯ উইকেট নিয়েছেন।
সাকিব আল হাসান ২০১৯ বিশ্বকাপে ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট নিয়ে সেরা পারফরমার হন। তিনি আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে বহুবার সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের হয়ে সর্বাধিক ৬৯০ আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন। ২০২৪ সালে তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন।